Thursday, December 9, 2021

পর্ব - ৪ (ফলা)

আমরা স্বরচিহ্ন বা কার নিয়ে আলোচনা করেছি ৩য় পর্বে।  এবার ব্যঞ্জনবর্ণের চিহ্ন অর্থাৎ ফলা নিয়ে আলোচনা করব এই ৪র্থ পর্বে।  ন-ফলা (ন/ণ), ম-ফলা, য-ফলা, র-ফলা/রেফ, ল-ফলা, ব-ফলা এই ছয়টি ফলা রয়েছে বাংলায়।

-ফলা বা দু'টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নিয়েই একটু আলোচনা করা যায়। -ফলা তার পূর্ববর্তী বর্ণের নিচে ছোট আকারে ব্যবহৃত হয়। শুধু -এর সঙ্গে একটু অন্য রূপে ব্যবহৃত হয় 

    গ্‌+ = গ্ন           অগ্নি, ভগ্ন ইত্যাদি

    ঘ্‌ + = ঘ্ন          বিঘ্ন, কৃতঘ্ন ইত্যাদি

    ত্‌ + = ত্ন         রত্ন, যত্ন ইত্যাদি

    ধ্‌ + =   ধ্ন         গৃধ্নু ইত্যাদি

    ন্‌ + ন্ন         ছিন্ন, ভিন্ন ইত্যাদি

    প্‌ + = প্ন         স্বপ্ন

    ম্‌ + ম্ন         নিম্ন

    শ্‌ + শ্ন         প্রশ্ন

    স্‌ +   = স্ন         স্নান

    হ্‌ +   = হ্ন         আহ্নিক, বহ্নি ইত্যাদি

 

-ফলা

    + ণ্ণ,         বিষণ্ণ

    + = ষ্ণ,         বিষ্ণু

    হ্‌ + = হ্ণ,         অপরাহ্ণ

-ফলা

    ক্‌ + = ক্ম,     রুক্মিণী 

    গ্‌ + = গ্ম,     যুগ্ম

    ঙ্‌ + = ঙ্ম      বাঙ্ময়

    ত্‌ + = ত্ম,     আত্মা

    দ্‌ + = দ্ম,     পদ্ম

    ন্‌ + = ন্ম,     জন্ম

    + = ম্ম,     সম্মান

    ল্‌ + = ল্ম,     গুল্ম

    + = শ্ম,     রশ্মি

    ষ্‌ + = ষ্ম,     গ্রীষ্ম

    স্‌ + = স্ম,     ভস্ম

    হ্‌ + =হ্ম,     ব্রহ্ম

-ফলায় -এর উচ্চারণ উহ্য থাকে এবং পূর্ববর্তী ধ্বনির দ্বিত্ব ঘটে, যেমন পদ্ম = পদ্দ। শুধু গ্ম, ন্ম ল্ম -এর ক্ষেত্রে -এর উচ্চারণ বজায় থাকে। এছাড়া হ্ম-এর ক্ষেত্রে ধ্বনির দ্বিত্ব ঘটে, যেমন ব্রহ্ম = ব্রম্

 

-ফলা

-ফলা  তার পূর্ববর্তী ধ্বনির ডানপাশে বসে আসলে -এর উচারণ Y-এর মতো হওয়ার কথা, কিন্তু বাংলায় তা হয় না, -ফলায় এই উচ্চারণ থেকে গেছে।  বিভিন্ন ধ্বনির সঙ্গে -ফলার ব্যবহার শব্দে তার প্রয়োগ দেখানো হল :

        ক্‌ + = ক্য     বাক্য

        খ্ +   = খ্য     ব্যাখ্যা, খ্যাতি

        গ্‌ + = গ্য     ভাগ্য

        চ্‌ + = চ্য     বাচ্য

        ছ্‌ + = ছ্য     ছ্যাবলা

        জ্‌ + = জ্য   রাজ্য

        ট্‌ + = ট্য      অকাট্য

        ঠ্‌ + = ঠ্য     পাঠ্য

         ড্‌ + = ড্য      জাড্য

        ঢ্‌ + = ঢ্য         ধনাঢ্য, ঢ্যামনা

        ণ্‌ + = ণ্য         অরণ্য

        ত্‌ + = ত্য         সত্য, ত্যক্ত

        থ্‌ + = থ্য         মিথ্যা

        দ্‌ + = দ্য         সদ্য

        ধ্‌ + = ধ্য         মধ্য, ধ্যান

        ন্‌ + = ন্য         অন্য, ন্যায়

        প্‌ + = প্য         আপ্যায়ন

        ফ্‌ + = ফ্য         ফ্যালফ্যাল

        ব্‌ + ব্য          ব্যাধ, নব্য

        ভ্‌ + ভ্য         সভ্য

        ম্‌ + ম্য         কাম্য

        য্‌ + য্য         ন্যায্য

        র্‌ + ্য         ্যাম্প

        ল্‌ + = ল্য         বাল্য

        শ্‌ + = শ্য         শ্যাম, বৈশ্য

        ষ্‌ + = ষ্য         শিষ্য

        স্‌ + = স্য         শস্য

        হ্‌ + = হ্য         সহ্য

উপরের উদাহরণ থেকে কিছু জিনিস লক্ষ যায়। -ফলায় Y উচ্চারণ নেই বললেই চলে। বরং পূর্ববর্তী ধ্বনির দ্বিত্ব ঘটে। যেমন, নব্য=নব্ হয় না, বরং নব্ হয়ে যায়। এটা ঘটে পদের মধ্যে বা অন্তে। পদের প্রথমে Y বা   উচ্চারণ থেকে যায়, যেমন, ধ্যান = ধেয়ান হয়। এটা বাংলায় ব্যবহৃত অ্যা স্বরধ্বনির (বর্ণমালায় নেই) প্রভাবে বা পদের শুরুতে ধ্বনির দ্বিত্ব সম্ভব নয় বলেই হয়েছে। হ্য-এর ক্ষেত্রে -এর ধ্বনিদ্বিত্ব হয়, -এর হয় না। যেমন, সহ্য = সয্ (সহ্ নয়)

 

-ফলা/রেফ

র্ব্যঞ্জন বর্ণের আগে ধ্বনি হিসেবে ব্যবহৃত হলে রেফ হয়ে যায়। ব্যঞ্জনধ্বনির পরে বর্ণ হিসেবে ব্যবহৃত হলে -ফলা হয়

রেফ-এর ব্যবহার

    র্‌ + = র্ক        অর্ক

    র্‌ + = র্খ         গোর্খা

    র্‌ + = র্গ         বর্গ

    র্‌ + = র্ঘ         দীর্ঘ

    র্‌ + = র্চ         অর্চনা

    র্‌ + = র্ছ         মূর্ছা

    র্‌ + = র্জ       অর্জন

    র্‌ + = র্ঝ         নির্ঝর

    র্‌ + = র্ট          আর্ট

    র্‌ + = র্ড        কার্ড

    র্‌ + = র্ণ          বর্ণ

    র্‌ + = র্ত         শর্ত

    র্‌ + = র্থ         তীর্থ

    র্‌ + = র্দ         পর্দা

    র্‌ + = র্ধ         অর্ধ

    র্‌ + = র্প        সর্প

    র্‌ + = র্ব         গর্ব

    র্‌ + = র্ভ        দুর্ভাগ্য

    র্‌ + = র্ম         মর্ম

    র্‌ + = র্য         আর্য

    র্‌ + = র্ল         দুর্লভ

    র্‌ + = র্শ         বর্শা

    র্‌ + = র্ষ         হর্ষ

    র্‌ + = র্স         ফর্সা

    র্‌ + = র্হ         গর্হিত

-ফলা

    ক্‌ + = ক্র      বক্র

    খ্‌ + = খ্র         খ্রিস্টান

    গ্‌ + = গ্র         গ্রহ

    ঘ্‌ + = ঘ্র         ঘ্রাণ

    জ্‌ + = জ্র      বজ্র

    ট্‌ + = ট্র         ট্রেন

    ড্‌ + = ড্র        ড্রাম

    ত্‌ + = ত্র        ত্রাস

    থ্‌ + = থ্র         থ্রি

    দ্‌ + = দ্র         দরিদ্র

    ধ্‌ + = ধ্র         ধ্রুপদী

    প্‌ + = প্র         প্রমাণ

    ফ্‌ + = ফ্র       আফ্রিকা

    ব্‌ + = ব্র         ব্রত

    ভ্‌ + = ভ্র         ভ্রমণ

    ম্‌ + = ম্র         নম্র 

    শ্‌ + = শ্র        বিশ্রাম

    হ্‌ + = হ্র         হ্রদ

রেফ মানে হসন্ত , এর পরে স্বরধ্বনি থাকে না। 'কয়ে রেফ' বলা হয় যদিও -ধ্বনি কিন্তু -এর আগে উচ্চারিত হয়, আর -ফলায় পরে উচ্চারিত হয়। হ্র-এর ক্ষেত্রে ধ্বনি বিপর্যয় ঘটে, অর্থাৎ আগে এসে যায়। উচ্চারণটা হ্রদ না হয়ে র্হদ হয়ে যায়

 

-ফলা

পূর্ববর্তী বর্ণের নিচে ছোট আকারে ব্যবহৃত হয়ে -ফলা হয়। যেমন,

        ক্‌ + = ক্ল         ক্লেশ

        গ্‌ + = গ্ল          গ্লানি

        প্‌ +  = প্ল         প্লাবন

        ফ্‌ + = ফ্ল         ফ্ল্যাশ

        ব্‌ + = ব্ল           ব্লাউজ

        ম্‌ + = ম্ল          ম্লান

        ল্‌ + = ল্ল         মল্ল

        শ্‌ + = শ্ল         শ্লীলতা

        স্‌ + = স্ল         স্লোগান

        হ্‌ + = হ্ল          আহ্লাদ

 

-ফলা 

বাংলা বর্ণমালায় দু'টি আছে। -ফলায় অন্তঃস্থ ব্যবহার হয়, যার উচ্চারণ w-এর মতো। হিন্দি, অসমিয়া ইত্যাদি ভাষায় আলাদা বর্ণ আছে, যেমন , ৱ। -ফলা পূর্ববর্তী বর্ণের নিচে বসে। যেমন,

        ক্‌ + = ক্ব         পক্ব

        গ্‌ + = গ্ব           দিগ্বিজয়

        জ্‌ + = জ্ব         জ্বর

        ত্‌ + = ত্ব           দাসত্ব

        + = থ্ব            পৃথ্বী

        দ্‌ + = দ্ব            বিদ্বান

        ধ্‌ + = ধ্ব           ধ্বনি

        ন্‌ + = ন্ব            অন্বয়

        ম্‌ + = ম্ব            ডিম্ব

        ল্‌ + = ল্ব           বিল্ব

        শ্‌ + = শ্ব            অশ্ব

        ষ্‌ + = ষ্ব            পিতৃষ্বসা

        স্‌ + = স্ব           স্বাদ

        হ্‌ + = হ্ব         আহ্বান

-ফলার যেহেতু অন্তঃস্থ , তাই এর 'ওয়া' উচ্চারণ বিলুপ্ত হয়ে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির দ্বিত্ব ঘটে। যেমন, পক্ব = পক্ (পক্ নয়) কিন্তু গ্ব ম্ব-এর ক্ষেত্রে ঔষ্ঠ্য উচ্চারণ হয়; যেমন, ডিম্ব = ডিম্ব। হ্ব- ক্ষেত্রে অন্তঃস্থ দ্বিত্ব ঘটে প্রথমটি  উচ্চারিত হয় -এর মতো; যেমন, আহ্বান = আওবান

ফলা নিয়ে আলোচনা আপাতত এই পর্যন্তই যথেষ্ট। পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করব যুক্তবর্ণ বা যুক্তব্যঞ্জন নিয়ে, ফলা যার একটা অংশবিশেষ 

 

x

No comments:

Post a Comment

পর্ব -- ৯ ( নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি, বাংলা সন্ধি ও জরুরি সন্ধি বিচ্ছেদ)

  এই পর্বে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সন্ধির তালিকা প্রকাশ করব, সঙ্গে থাকবে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধিও। তবে তার আগে বাংলা সন্ধি নিয়ে আ...